সাফল্যের ৭৩ বছরঃ আবেগের নাম ছাত্রলীগ
মাহমুদুল হাসান মাহমুদুল হাসান
নিউজ এডিটর

শকুনের মরন কামড় থেকে বাঙালি জাতিকে উদ্ধারের প্রয়োজনেই ৪৮ এর ৪ঠা জানুয়ারি জন্ম নেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জন্ম অথবা পথচলা কোনটাই ছিল না কখনও অনূকূলে। সময়ের স্রোতধারায় প্রতিকূল ঐতিহাসিক মুহূর্তে জন্ম।
সংগ্রাম থেকে মুক্তিই যার স্পন্দন। অন্যায়ে প্রতিবাদের কণ্ঠ ছাত্রলীগ। মুক্তিকামী মানুষের আবেগের নাম ছাত্রলীগ। নানান বাধা বিপত্তি, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ৭৩ বছরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহৎ অসাম্প্রদায়িক পরিবার ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পিঠ জুড়ে ছাত্রলীগের ইতিহাস। ত্যাগ আর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ছাত্রলীগের জন্ম।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮’র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। ’৬৬’র ছয় দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, মাঠে-ঘাটে ছড়িয়ে পড়ে। ছয় দফাকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এছাড়াও ’৬৮র শিক্ষা আন্দোলন এবং ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশ যে কালো মেঘ গ্রাস করেছিল, সেই মেঘ সরাতে প্রত্যাশার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন। সেদিন প্রিয় নেত্রীর পাশে ভ্যানগার্ডের ভূমিকায় ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮৩ সালে শিক্ষা আন্দোলন ও সর্বদলীয় ছাত্র-ঐক্যের ১০ দফা তৈরিতে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শিক্ষার অধিকার প্রসারে শামসুল হক ও অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর কমিশনের রিপোর্ট তৈরিতে ছাত্র সমাজের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৮৮ সালে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি মোকাবেলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটি ১৯৯৮ সালের বন্যাসহ সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একই কার্যক্রম নিয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
আজও মৌলবাদী সংগঠন ও ৭১-এর পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। এই লড়াইয়ের সফলতা যেমন আমাদের সকলের, তেমনিভাবে ব্যর্থতাও আমাদেরকে করুণ কষ্ট দেয় ও দেবে যুগযুগ ধরে। কারণ এই ব্যর্থতার কারণেই আমরা ৭৫ এর ১৫ই অগাস্ট জাতির পিতাকে হারিয়েছি।
হাজারও গৌরবগাথা ইতিহাস ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগ করতে এসে কতজনকে যে মৌলবাদী শক্তির হাতে নৃশংসভাবে জীবন দিতে হয়েছে? তাদের পরিবারগুলোর কি অবস্থা? ৪৮ থেকে অদ্যাবধি কত লাখ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পঙ্গু হয়ে ভিখারির মতো জীবনযাপন করছে? ছাত্রলীগ করতে এসে কত রাত্রি যে নেতাকর্মীরা ঘুমায় না, কত অত্যাচার সহ্য করে, মৃত্যুকে কতবার চোখের সামনে দেখেছে, মৌলবাদী শিবিরের অত্যাচারে কত জীবন সার্টিফিকেট ছাড়াই ঝড়ে গেছে তা কি খোঁজ নিয়েছে কেউ? ৪৮ থেকে অদ্যাবধি নরপশু পাকিস্তান ও ৭১এর পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ছাত্রলীগ যত রক্ত দিয়েছে এতো রক্ত অন্য কাউকে দিতে হয়নি।
সংগ্রাম আর মুক্তির আন্দোলনে হারিয়ে যাওয়া সকল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। নির্যাতিত সকল নেতাকর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন প্রত্যাশা করি। ছাত্রলীগের অনুভূতি, ভালবাসা,আস্থা, ভরসা, বিশ্বাসের একমাত্র অভিভাবক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
লেখকঃ মীর হামজা মাহমুদ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোকিত ভোর/ মাহমুদ