নদী রক্ষায় আমাদের ভাবতে হবে
মামুন হোসাইন মামুন হোসাইন
সাব-এডিটর

সিরাজুল হোসাইনঃ বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। এদেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা এবং খাল-বিল। রয়েছে আরো আন্তর্জাতিক নদী সমূহ।
প্রত্যেকটি দেশের জন্য নদীগুলো তার দেশের গৌরবের, ঐতিহ্যের। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম ব-দ্বীপ খ্যাত দেশ। যার অধিকাংশ ভূমি গঠিত হয়েছে পলিমাটি থেকে।
আর এই পলিমাটির উর্বরতাশক্তি অনেক বেশি। যা তার উর্বরতাশক্ত ধরে রাখতে পারে শতাব্দীর পর শতাব্দী। আর পলিমাটি গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করে এ দেশের নদ-নদী।
নদীতে পলিমাটি বহন করে উর্বর ভূমিতে রূপান্তর করে। শুধু তাই নয় বরং এদেশের নদীগুলো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে। আদিকাল থেকেই মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি।
যেখানে মুল ভূমিকায় ছিল নদ-নদী। নদী এ দেশে জালের মতো বিস্তৃত। দেশের অর্থনীতি, শিল্পনগরী, রাজধানী, শহর,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , আইন, আদালত গড়ে উঠেছিল নদীকে কেন্দ্র করে।
এক সময় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে বলা হত “শস্য ভান্ডার “। বিশেষ করে বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলকে। একটি প্রবাদ বাক্য আছে বরিশাল সম্পর্কে ” ধান-নদী- খাল, এই তিনে বরিশাল “।
এখানে ও নদীর ভুমিকাকে বুঝিয়েছেন। এ দেশের উত্তরের নদীগুলো দিন দিন পানি শূন্য হয়ে যৌবন হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু এই সল্প পানি বহন করে পলিমাটি, যা মাটির উর্বরতাকে বৃদ্ধি করে যৌবন বৃদ্ধি করে বাংলার কৃষি ভূমিকে। যে পানি অব্যবহ্রত থেকে যায়।
তা গিয়ে মিশে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মহনায় এবং তৈরি করে নতুন নতুন ভূমি।
নদীর অপার উপাদান হলো ইলিশ। যা রপ্তানি করে দেশের অনেক সুনাম ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। এ ছাড়া ও রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ এবং সম্পদ।
কৃষি তথ্যমতে, এ দেশ চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, সবজিতে তৃতীয়,মাছে চতুর্থ ইত্যাদি। এসব সফলতার পিছনে রয়েছে এদেশের নদ-নদী।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের নদ-নদীগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, বিভিন্ন মহলের অপব্যবহার এবং অযত্নে-অবহেলায় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে সরকারের মেগাপ্রজেক্ট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় খাল ভরাট করে রাস্তা ফোর-লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। উন্নয়নমুলক প্রকল্পের নাম দিয়ে নদী ও খাল-বিল ভরাট করা হচ্ছে এবং অবৈক স্থাপনা নির্মান করা হচ্ছে।
এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা আরো কয়েকটি বিষয়কে দায়ি করেন। যেমন- নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীর উপর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মান, শিল্পকারখানার বর্জ্য, নদী ভরাট করা ইত্যাদি।
জাতীয় নদী কমিশনের একটি তথ্য অনুযায়ী, এক সময় দেশে ১২শ’র বেশি নদ-নদী ছিল। বর্তমানে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০টিতে। এর মধ্যে আবার ১৫৩ মরে যাওয়ার পথে।
জাতির এই সংকটলগ্নে এসে আমাদের দেশের নদী গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। যেহেতু এই দেশ নদীমাতৃক এবং কৃষি নির্ভর। তাই এদেশের নদ-নদীকে রক্ষা করা সরকার এবং প্রশাসনের পাশাপাশি সকলের একান্ত কর্তব্য।
তাই সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। শিল্পকারখানা ও মানুষ সৃষ্টি বর্জ্য থেকে নদীকে রক্ষা করতে হবে। নদীর সীমানা রক্ষায় সার্ভে গঠন করে কার্যকরি ভুমিকা পালন করা এবং নদীবান্ধব অর্তনীতি ও যোগাযোগ চালু করা।
নদীগুলোকে অবৈধ স্থাপনা থেকে রক্ষা করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কাজে নদী ভরাট না করা এবং এই বিষয় জনসচেতনতা মূলক কেম্পেইন করা। যার ফলে এদেশের নদীর প্রাণ ফিরে আসবে। আর এদেশ গড়ে উঠবে সমৃদ্ধশীল দেশ হিসেবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।